বিটকয়েনের উল্লেখযোগ্য দরপতন শুরু হয়েছে, যা সম্ভবত আরও ব্যাপক মাত্রার বিয়ারিশ প্রবণতার সূচনা মাত্র। পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সম্পূর্ণ ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট কোনো না কোনোভাবে বিটকয়েনের মূল্যের দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে। কিছু অল্টকয়েন ব্যতিক্রম হতে পারে, তবে বেশিরভাগই বিটকয়েনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ট্রেড করে, পার্থক্য শুধুমাত্র সেগুলোর ভোলাটিলিটির ক্ষেত্রে। গত কয়েক দিনে বিটকয়েনের মূল্য ১১% হ্রাস পেয়েছে, আর ইথেরিয়ামের ১৬% দরপতন হয়েছে।
ইথেরিয়ামের দরপতনের জন্য আলাদা কোনো কারণ খোঁজার দরকার নেই, কারণ এটি স্বাভাবিকভাবেই ঘটেছে। ETH-ETF থেকে বিশাল মূলধন বহিঃপ্রবাহ বিটকয়েনের দরপতনের পরিণতি মাত্র। অর্থাৎ, বড় বিনিয়োগকারীরা বিটকয়েন বিক্রি করার ফলে ইথেরিয়ামের ট্রেডাররা মার্কেটে প্যানিক সেলিং বা আতংকিত হয়ে বিক্রি করা শুরু হয়েছে, যা ETH-ETF-এর ব্যাপক মূলধন বহিঃপ্রবাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেখানে মার্কিন স্টক মার্কেটের পরিস্থিতিকে "অতিরিক্ত অস্থিতিশূল" বলা যেতে পারে, সেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। স্টকের বিপরীতে, ক্রিপ্টো অ্যাসেট কোনো বাস্তব সম্পদের মাধ্যমে সমর্থিত নয়। যদি চাহিদা থাকে, তাহলে ক্রিপ্টোর দাম ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। আবার, যদি চাহিদা বিলীন হয়ে যায়, তাহলে দাম শূন্যেও নেমে যেতে পারে—এমনকি মাইনিং খরচও এটি প্রতিরোধ করতে পারবে না, কারণ মাইনাররা সহজেই তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পারে।
বর্তমানে ইথেরিয়ামের মূল্য চতুর্থ বা পঞ্চমবারের মতো বার্ষিক সর্বনিম্ন লেভেলে ফিরে এসেছে। বিটকয়েনের মূল্য গত এক বছরে শক্তিশালীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে ইথেরিয়াম সেই তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। যদি এখন বিটকয়েনের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতায় শুরু হয়, তাহলে ইথেরিয়ামের উপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে?
ETH/USD-এর দৈনিক চার্টের বিশ্লেষণ
দৈনিক টাইমফ্রেমে স্পষ্টভাবেই ইথেরিয়ামের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। সর্বশেষ স্ট্রাকচারাল হাই পয়েন্টটি CHOCH (চেঞ্জ অব ক্যারেকটার) লেভেলে চিহ্নিত হয়েছে। এই লেভেলটি ব্রেকআউট করে মূল্য উপরের দিকে গেলে সেটি বুলিশ প্রবণতায় পরিবর্তন নির্দেশ করবে। তবে, ইথেরিয়ামের মূল্যের $3,500-এ ফিরে আসার সম্ভাবনা বর্তমানে খুবই কম।
এর মানে ইথেরিয়ামের দরপতন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা বেশি। বিটকয়েনের মূল্য নির্ধারিত রেঞ্জ ব্রেক করার ফলে ইথেরিয়ামের কনসোলিডেশন পর্যায় (ফ্ল্যাট মার্কেট) শেষ হয়েছে। ৩১ জানুয়ারিতে গঠিত একটি অর্ডার ব্লক (OB) ভবিষ্যতে রিয়্যাকশন লেভেল হিসেবে কাজ করতে পারে, তবে স্বল্পমেয়াদে মূল্য সম্ভবত ঐ সর্বোচ্চ লেভেল লেভেল পুনরায় টেস্ট করবে না। একমাত্র সম্ভাব্য সাপোর্ট জোন, যা ইথেরিয়ামের দরপতনকে সাময়িকভাবে থামাতে পারে, সেটি $2,146 থেকে $2,320 রেঞ্জের মধ্যে অবস্থিত।
ETH/USD-এর ৪-ঘণ্টার চার্টের বিশ্লেষণ
৪-ঘণ্টার টাইমফ্রেমে পরিস্থিতি তুলনামূলক স্পষ্ট। বিটকয়েন বাই পজিশন ও সেল পজিশন উভয় দিকেই লিকুইডিটি সুইপ করেছে, তবে ইথেরিয়াম শুধুমাত্র সেল পজিশনে লিকুইডিটি সুইপ করেছে। প্রত্যাশিতভাবেই, ইথেরিয়ামের মূল্য রিজেকশন ব্লকের মিডপয়েন্ট ও প্রধান দৈনিক সাপোর্ট জোনে পৌঁছেছে।
এই সাপোর্ট জোন সাময়িকভাবে ইথেরিয়ামের মূল্যের স্থিতিশীলতা আনতে পারে, তবে যদি বিটকয়েনের দরপতন অব্যাহত থাকে, তাহলে ইথেরিয়ামের মূল্যও আরও কমতে পারে। যদি বিটকয়েনের ডমিন্যান্স সূচক কমত, তাহলে অনুমান করা যেত যে মূলধন বিটকয়েন থেকে ইথেরিয়াম এবং অন্যান্য অল্টকয়েনের দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছে। তবে, বিটকয়েনের ডমিন্যান্স সূচক স্থিতিশীল রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে বিনিয়োগকারীরা ইথেরিয়ামে বিনিয়োগ করছে না।
ইথেরিয়াম (ETH/USD) ট্রেডিংয়ের কৌশল
ইথেরিয়ামের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতায় বিরাজ করছে, তাই ট্রেডিং কৌশলে প্রধানত সেল সেটআপগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, বাই সেটআপ নয়। সর্বশেষ লিকুইডিটি সুইপগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে যে ইথেরিয়াম দরপতনের জন্য প্রস্তুত ছিল, যদিও বিটকয়েনের সংকেতগুলো তুলনামূলকভাবে কম স্পষ্ট ছিল।
এই পর্যায়ে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো বিটকয়েনের মূল্যের মুভমেন্ট, নতুন ট্রেডিং প্যাটার্নের উদ্ভব, লিকুইডিটি সুইপ, এবং কনফার্মেশন সিগন্যাল। গত দুই দিনে একাধিক ফেয়ার ভ্যালু গ্যাপ (FVG) তৈরি হয়েছে। তবে প্রতিটি FVG বিশ্লেষণ করা কার্যকর নয়, কারণ এটি সম্ভাব্য ট্রেড সেটআপগুলোতে অতিরিক্ত বিস্তৃত পরিসর তৈরি করবে। এর পরিবর্তে, একটি আদর্শ FVG সেটআপ তিনটি স্পষ্ট ক্যান্ডেল গঠন এবং স্পষ্ট স্ট্রাকচার থাকার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা উচিত।
চার্টের বিশ্লেষণে ব্যবহৃত মূল ICT-এর ব্যাখা
CHOCH (চেঞ্জ অব ক্যারেকটার) – প্রবণতার পরিবর্তন নির্দেশকারী সংকেত।
লিকুইডিটি – স্টপ লস ক্লাস্টার, যা মার্কেট মেকাররা পজিশন অ্যাকুমুলেট করতে লক্ষ্য করে।
FVG (ফেয়ার ভ্যালু গ্যাপ) – এমন একটি এরিয়া যেখানে মূল্য অত্যন্ত দ্রুতগতিতে মুভমেন্ট প্রদর্শন করে, যা পরবর্তীতে পুনরায় টেস্ট করা হতে পারে।
IFVG (ইনভার্স ফেয়ার ভ্যালু গ্যাপ) – একটি এরিয়া যেখানে মূল্য কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ব্রেক করে যায় এবং পরে বিপরীত দিক থেকে পুনরায় টেস্ট করে।
OB (অর্ডার ব্লক) – মার্কেট মেকারদের দ্বারা লিকুইডিটি অ্যাবসর্ভেশনের আগে প্রবণতা বিপরীতমুখী করার জন্য ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যান্ডেল।