মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্থরতার সংকেত পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা মার্কিন ডলার ভিত্তিক ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেটে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এর মূল কারণ হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ।
সোমবার ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্টের (ISM) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন ম্যানুফ্যাকচারিং PMI সূচক জানুয়ারির 50.9 থেকে কমে 50.3-এ নেমেছে, যা পূর্বাভাসকৃত 50.5-এর চেয়েও নিচে। এই সূচকের পতন উৎপাদন খাতে মন্থরতার ইঙ্গিত দেয়, যা দুর্বল চাহিদা, উৎপাদনের স্থিতিশীলতা, এবং কর্মসংস্থান হ্রাসের কারণে ঘটেছে। নতুন প্রশাসনের শুল্ক নীতির কারণে কোম্পানিগুলো শুরুতেই একটি পরিচালনাগত ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে। ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে নতুন অর্ডার স্থগিত হচ্ছে, সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে এবং উৎপাদন খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
নতুন অর্ডারের পরিমাণ মার্চ ২০২২ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে, যা 55.1 থেকে 48.6-এ নেমেছে। কর্মসংস্থান হারও 50.3 থেকে 47.6-এ নেমে এসেছে, যা ৫০-এর সংকোচন স্তরের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে উৎপাদন হার হঠাৎ কমে গেছে, যা গত মাসের 52.5 থেকে 50.7-এ নেমে এসেছে। পাশাপাশি, মূল্যচাপ জুন ২০২২-এর পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা 54.9 থেকে বেড়ে 62.4 হয়েছে। একই প্রবণতা অন্যান্য ম্যানুফ্যাকচারিং ইনভেন্টরি সূচকেও দেখা যাচ্ছে।
আজ, কানাডা এবং মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধে যোগ দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং এই দেশগুলোর আমদানির ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে, মার্কিন জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্থরতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যার ফলে গত সপ্তাহের সংক্ষিপ্ত পুনরুদ্ধারের পর স্টক মার্কেটের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে কারণ চীন ঘোষণা করেছে যে তারা ১০ মার্চ থেকে নির্দিষ্ট মার্কিন পণ্যের ওপর ১৫% পর্যন্ত পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন, আমদানি শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ, এবং ওয়াশিংটন ও ইউক্রেনের মধ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে সোমবার মার্কিন স্টক সূচকগুলো 1.5% থেকে 2.5% পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
তেলের বাজারের বর্তমান অবস্থা
স্বল্পমেয়াদে BRENT এবং WTI অপরিশোধিত তেলের দামের নিম্নমুখী প্রবণতায় বিরাজ করছে, যা জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের পর সবচেয়ে বড় দরপতনের সম্মুখীন হয়েছে। মূল কারণ হলো, OPEC+ ঘোষণা করেছে যে তারা এপ্রিলে পূর্ব পরিকল্পিত উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা বজায় রাখবে। এর ফলে বৈশ্বিক পর্যায়ে সরবরাহ বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা তেলের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন মার্কিন শুল্ক আরোপ দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধীর করে দিতে পারে এবং তেলের চাহিদা কমাতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটের বর্তমান অবস্থা
গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টের কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে স্বল্পস্থায়ী পুনরুদ্ধার দেখা গিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন যে মার্কিন ক্রিপ্টো রিজার্ভ "এই গুরুত্বপূর্ণ খাতকে পুনরুজ্জীবিত করবে" এবং আগের প্রশাসনের বিধিনিষেধমূলক নীতিগুলো বাতিল করা হবে । তবে, সোমবার ক্রিপ্টো মার্ক্তে আবারও বড় ধরনের দরপতনের সম্মুখীন হয়েছে এবং আজকের ট্রেডিং সেশনেও নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে, যার ফলে আগের সমস্ত বৃদ্ধি মিলিয়ে গেছে।
দৈনিক বাজার পূর্বাভাস
#SPX
S&P 500 CFD কন্ট্রাক্টের দর এখনো 5807.00–6124.80 রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে, তবে এটি নিম্নমুখী প্রবণতার সম্মুখীন হয়েছে। যদি কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আজ নিশ্চিত হয় এবং ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে এটি কেবল শুরু, সামনে আরও শুল্ক আরোপ করার হবে তাহলে এই রেঞ্জের নিম্নসীমার ব্রেক ঘটে 5700.00 পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
#NDX
নাসডাক 100 CFD কন্ট্রাক্টও নিম্নমুখী প্রবণতার মধ্যে রয়েছে এবং 20,500 লেভেলের কাছাকাছি ট্রেড করছে, যা প্রধান সাপোর্ট লেভেল। প্রযুক্তি খাত চীনের পাল্টা শুল্কের প্রভাব অনুভব করছে, যা মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি পরিস্থিতি আরও নেতিবাচক হয়, তাহলে কন্ট্রাক্টটির দর 19,863.00 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে।