বাণিজ্য যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উদ্বেগের মধ্যে মার্কিন স্টক মার্কেটে অস্থিরতা
মঙ্গলবার, মার্কিন স্টক সূচকগুলোতে ব্যাপক দরপতন ঘটে, যেন আকস্মিকভাবে ট্রেডারদের "মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের" কথা মনে পড়ে গেছে। ডাও জোন্স সূচক ১.৬% হ্রাস পেয়েছে, S&P 500 সূচক ১.২% কমেছে, এবং নাসডাক ০.৪% হ্রাস পেয়েছে। এই দরপতনের মূল কারণ হচ্ছে নতুন করে শুরু হওয়া বাণিজ্য যুদ্ধ। মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ২৫% শুল্ক কার্যকর হয়েছে, এবং চীনের উপর অতিরিক্ত ১০-২০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যার ফলে মার্কেটে হালকা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
দিনের মধ্যভাগে আতঙ্ক চরমে পৌঁছে যায়, যখন S&P 500 সূচকটি ২০০-দিনের মুভিং অ্যাভারেজ (৫,৭২৫)-এর কাছে চলে আসে। তবে, এনভিডিয়া (+1.7%) এবং আমাজনের (+0.9%) স্টকের মূল্য বৃদ্ধি সাময়িকভাবে নাসডাক সূচককে ঊর্ধ্বমুখী করে।
তবে, এই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। স্টকে মার্কেটে দ্রুত বিক্রির প্রবণতা শুরু হয়, এবং S&P 500-এর ১১টি সেক্টরের মধ্যে ১০টি সেক্টরের স্টকের দরপতনের সাথে লেনদেন হয়েছে। আর্থিক খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা ৩.৫% কমে গেছে। অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকিং খাত থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নতুন করে শুল্ক আরোপের ফলে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ, মার্কিন স্টক মার্কেট সূচক নির্বাচনের আগের স্তরে ফিরে যাচ্ছে
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকে, S&P 500-এর বাজার মূলধন ৩.৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর নতুন করে ২৫% শুল্ক আরোপ করায় বিনিয়োগকারীরা লাভ তুলে নিতে শুরু করেছেন।
ফলস্বরূপ, স্টক মার্কেট সূচক ট্রাম্পের জয়ের দিনের স্তরে ফিরে এসেছে। এখন, হোয়াইট হাউস কবে মার্কেটের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে বিনিয়োগকারীরা সেই অপেক্ষা আছেন । কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন S&P 500 সূচক যদি নির্বাচনের আগে নভেম্বরের স্তরে পৌঁছায়, তখনই মার্কেটে পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হবে। ট্রাম্প এ বিষয়ে এখনো নীরব থাকলেও, বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক ইতোমধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে একটি চুক্তির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট আশ্বস্ত করছেন যে মার্কেটের এই দরপতন শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী, যা "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সোনালি সময়ের" দিকে নিয়ে যাবে। তবে, এটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে।
এছাড়া, অ্যাটলান্টা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রথম প্রান্তিকে মার্কিন জিডিপি সংকুচিত হতে পারে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অন্যান্য দেশগুলোর পাল্টা বাণিজ্য শুল্ক এবং ইলন মাস্কের ফেডারেল কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত মার্কেটে আরও চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
বাণিজ্য যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তার মধ্যে মার্কিন স্টক ফিউচার চাপের মুখে রয়েছে
গতকালের দরপতনের পর, মার্কেটে পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হলেও, বিনিয়োগকারীদের আশাবাদ খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। আজকের এশিয়ান ট্রেডিংয়ে, S&P 500 সূচক ০.১% বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং নাসডাক সূচক ০.২% বেড়েছে। সাময়িক ইতিবাচক প্রবণতা উৎস ছিল বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিকের মন্তব্য, যেখানে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ট্রাম্প প্রশাসন কিছু শুল্ক প্রত্যাহার করতে পারে। তবে, এই আশাবাদ দ্রুত মিলিয়ে গেছে, এবং মার্কেটে পুনরায় নিম্নমুখী প্রবণতায় ফিরে এসেছে।
এদিকে, চীন ঘোষণা করেছে যে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫%-ই থাকবে। যদিও দেশটি মূল্যস্ফীতি, রিয়েল এস্টেট সংকট, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে, চীনের নীতিনির্ধারকরা পরবর্তী ৩০ বছরে সর্বোচ্চ বাজেট ঘাটতির পরিকল্পনা করছে। এই ঘোষণার পর, ইউয়ানের মান সামান্য দুর্বল হয়েছে, তবে চীনা কর্তৃপক্ষের সম্ভাব্য নীতিগত সহায়তার আশায় হংকং স্টক সয়চক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, জার্মান সরকার প্রতিরক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য শত বিলিয়ন ইউরো বরাদ্দের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এই পদক্ষেপ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের চাহিদা বাড়িয়েছে এবং মার্কেটে সাময়িকভাবে ইতিবাচক প্রবণতা ফিরিয়ে এনেছে।
বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।