logo

FX.co ★ EUR/USD: ইসিবির মার্চের বৈঠকের প্রাক-পর্যালোচনা

EUR/USD: ইসিবির মার্চের বৈঠকের প্রাক-পর্যালোচনা

বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ECB) মার্চ মাসের বৈঠকে অনুষ্ঠিত হবে, যেটিতে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাসের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। মার্কেটের ট্রেডাররা ইতোমধ্যে ইউরোর মূল্যে এই প্রত্যাশা মূল্যায়ন করেছে, তাই ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দের বক্তব্য এবং সংযুক্ত বিবৃতির শব্দচয়নের দিকে দৃষ্টি থাকবে। তবে ইউরোজোনের সাম্প্রতিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনগুলোর ফলাফল আরও বেশি প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

EUR/USD: ইসিবির মার্চের বৈঠকের প্রাক-পর্যালোচনা

এর উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন। ফেব্রুয়ারিতে ইউরোজোনের সামগ্রিক CPI বার্ষিক ভিত্তিতে ২.৪% এ নেমে এসেছে, যেখানে অধিকাংশ বিশ্লেষক প্রত্যাশা করেছিলেন যে সূচকটি ২.৩%-এ পৌঁছাবে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত টানা চার মাস ইইউ-এর মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও, ফেব্রুয়ারিতে সেই প্রবণতা বন্ধ হয়েছে। কোর CPI পাঁচ মাস ধরে ২.৭%-এ স্থিতিশীল ছিল, যা সামান্য হ্রাস পেয়ে ২.৬%-এ এসেছে—তবে এই ফলাফল ২.৫% এর প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।

অন্যদিকে, ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ইউরোজোনের অর্থনীতি পূর্বাভাসের চেয়ে ইতিবাচক ফলাফল প্রদর্শন করেছে—যা প্রান্তিক ভিত্তিতে ০.১% প্রবৃদ্ধি প্রদর্শন করেছে, যেখানে শূন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, মুদ্রাস্ফীতি কমছে, তবে ধীরগতিতে, এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তবে খুবই দুর্বলভাবে।

মার্কেটের ট্রেডাররা একরকম নিশ্চিতভাবে ধারণা করছে যে ইসিবি এই বৈঠকে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাবে। তবে, ভবিষ্যৎ আর্থিক নীতিমালা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতবিভেদ রয়েছে।

ব্লুমবার্গের জরিপ অনুযায়ী, ইসিবির সুদের হার কমানোর চক্রের শেষের দিকে রয়েছে, কারণ ব্যাংকটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ বাড়ছে। এই মতপার্থক্য ইসিবির বিবৃতিতেও প্রতিফলিত হতে পারে, যা ইউরোর জন্য ইতিবাচক হতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পিয়েরে ওয়ুনশ বলেছেন যে তার সহকর্মীদের উচিত "অন্ধভাবে মুদ্রাস্ফীতি ২.০%-এর লক্ষ্যমাত্রায় নামিয়ে আনার পথ অনুসরণ না করা," অর্থাৎ তাদের যেকোনো মূল্যে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত এড়ানো উচিত। বুন্দেসব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জোয়াকিম ন্যাগেলও অনুরূপ মতামত প্রকাশ করেছেন, তিনি বলেছেন যে ভবিষ্যতে সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

অন্যদিকে, ইসিবির এক্সিকিউটিভ বোর্ড সদস্য ইসাবেল স্নাবেল বলেছেন যে মুদ্রানীতি এখনো যথেষ্ট কঠোর কিনা তা নিশ্চিত নয়।লিথুয়ানিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর গেডিমিনাস সিমকুস বলেছেন যে মার্চে সুদের হার কমানোর পরেও পুরো বছর জুড়ে আরও সুদের হার কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

মরগ্যান স্ট্যানলির বিশ্লেষকদের মতে, ইসিবি মার্চে সুদের হার কমানোর পর আরও হ্রাসের ইঙ্গিত দেবে, যা এপ্রিলের বৈঠকে আরেকবার সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। এটি লক্ষণীয় যে, ফেব্রুয়ারির শুরুতে মরগান স্ট্যানলির অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে ইসিবি এপ্রিল মাসে "অপেক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের" নীতি গ্রহণ করবে। তবে, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাওয়ায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হওয়ার কারণে তারা তাদের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে।

এদিকে, রাবোব্যাঙ্কের বিশ্লেষকরা ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তারা মনে করেন যে ইসিবি মার্চ মাসে "হকিশ বা কঠোর নীতিমালা" বাস্তবায়ন করবে—অর্থাৎ সুদের হার কমাবে, তবে সুদের হারের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত অন্তত জুন মাস পর্যন্ত বিলম্বিত হবে বলে ইঙ্গিত দেবে।

আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, ইসিবির চূড়ান্ত বিবৃতিতে ভবিষ্যতে সুদের হার কমানোর মাত্রা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিভাজন প্রতিফলিত হবে। ইসিবির অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্যই ইউরোর জন্য সহায়ক হবে এবং এটি EUR/USD পেয়ারের ক্রেতাদের পক্ষে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

বর্তমানে, EUR/USD পেয়ারের মূল্য বাড়ছে কারণ মার্কিন ডলার দুর্বল হয়েছে, যা কংগ্রেসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের ফলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। মার্কেটের ট্রেডাররা আশঙ্কা করছেন যে বাড়তে থাকা শুল্ক বিরোধ মার্কিন অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। স্ট্যাগফ্লেশন বা অর্থনৈতিক স্থবিরতার ঝুঁকি বেড়েছে, এবং ফেডারেল রিজার্ভের ডোভিশ বা নমনীয় নীতিমালার প্রতি আরও বেশি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ট্রেডাররা প্রায় নিশ্চিত যে ফেড জুন মাসের বৈঠকে সুদের হার কমাবে।

ADP থেকে প্রকাশিত কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদনের দুর্বল ফলাফলের কারণে মার্কিন ডলারের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান মাত্র ৭৭,০০০ বৃদ্ধি পেয়েছে—যা জানুয়ারি ২০২১-এর পর সর্বনিম্ন। ADP থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সাধারণত নন-ফার্ম পেরোলের সাথে সম্পর্কিত, তাই এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ডলার সূচক ১০৪ রেঞ্জে নেমে গেছে, যা পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরের কাছাকাছি।

ফলস্বরূপ, EUR/USD পেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে 1.08 লেভেলের কাছাকাছি পৌঁছেছে। যদি ইসিবি মার্চ মাসের বৈঠকে "মাঝারি হকিশ বা কঠোর" অবস্থান গ্রহণ করে, তাহলে ইউরো আরও শক্তিশালী হবে, এবং EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.0830 এর রেজিস্ট্যান্স লেভেল (কুমো ক্লাউডের নিম্ন সীমানা, যা W1 টাইমফ্রেমে বলিংগার ব্যান্ডের উপরের লাইন) টেস্ট করতে পারে। তবে, এমনকি যদি ট্রেডাররা এই বৈঠকের ফলাফলকে ইউরোর জন্য বিয়ারিশ বলে ব্যাখ্যা করে (অর্থাৎ, ইসিবি যদি ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান ধরে রাখে), তাহলে যে কোনো কারেক্টিভ দরপতনকে মার্কিন ডলারের সামগ্রিক দুর্বলতার কারণে লং পজিশনে এন্ট্রির সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত।


* এখানে পোস্ট করা মার্কেট বিশ্লেষণ মানে আপনার সচেতনতা বৃদ্ধি করা, কিন্তু একটি ট্রেড করার নির্দেশনা প্রদান করা নয়
Go to the articles list Go to this author's articles Open trading account