মঙ্গলবারের নিয়মিত ট্রেডিং সেশন শেষে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টক সূচকসমূহে আবারও দরপতনের মধ্যে দিয়ে দৈনিক লেনদেন শেষ হয়েছে এবং এখন বার্ষিক সর্বনিম্ন স্তর এক ধাপ দূরে অবস্থান করছে। S&P 500 সূচক 1.57% হ্রাস পেয়েছে, নাসডাক 100 সূচক 2.15% হ্রাস পেয়েছে এবং ডাও জোন্স ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক 0.84% হ্রাস পেয়েছে।
মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের পতন হয়েছে এবং ট্রাম্প চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে এশিয়ার স্টক সূচকগুলো ২০২৪ সালের জানুয়ারির পর সর্বনিম্ন লেভেলে পৌঁছেছে। মার্কিন বন্ডের দর কমেছে, আর ৩০ বছরের ট্রেজারি বন্ডের ইয়েল্ড বা লভ্যাংশ বেড়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ লেভেলে পৌঁছেছে। মার্কিন ডলার আবারও দুর্বল হয়েছে। ইউরোপীয় স্টক সূচকের ফিউচারের দর 4.4% কমেছে এবং মার্কিন স্টক সূচকের ফিউচারের দর 1% থেকে 2.5% পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে—যা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির সম্ভাব্য মন্দা নিয়ে উদ্বেগকে প্রতিফলিত করছে। অপরিশোধিত তেলের দর নতুন করে চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
ট্রাম্পের শুল্কনীতি মূলধন প্রবাহের সমস্যা আরও তীব্র করে তুলেছে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এটি বিনিয়োগকারী ও মার্কেটের ট্রেডারদের মধ্যে আস্থার গভীর সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যে মার্কিন ট্রেজারি বন্ড একসময় বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হতো, সেগুলোকেই এখন আর্থিক খাতে উদ্বেগ এবং পাল্টা শুল্কের প্রভাবে সম্ভাব্য 'ডাম্পিং'-এর ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত রাখতে হচ্ছে।
বহু বিনিয়োগকারী ট্রাম্পের এই বাণিজ্যযুদ্ধ বৃদ্ধির বিষয়টির তীব্রভাবে সমালোচনা করেছেন, যেখানে চীনের ওপর শুল্ক 104%-এ উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে জেপিমরগ্যান এবং গোল্ডম্যান শ্যাক্সের অর্থনীতিবিদরা যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক মন্দার সম্ভাবনা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন। এই পদক্ষেপের ফলে বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিশ্লেষকরা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিতে শুরু করেছেন।
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনার ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে চাপ তৈরি হয়েছে, কোম্পানিগুলো তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে এবং বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজছে। কৃষি থেকে শুরু করে প্রযুক্তি পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়ছে—লাভজনকতা হ্রাস পাচ্ছে এবং ব্যবসাইয়িক পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে। বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার প্রেক্ষিতে, অনেক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক সমাধানের জন্য আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে দ্রুত কোনো সমাধান আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ এবং অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য আরও ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করতে পারে। একইসাথে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরেকটি উদ্বেগ বাড়ছে—এটি হলো, মার্কেটে চলমান চাপ ও অস্থিরতার কারণে আর্থিক ব্যবস্থার কোনো এক অংশ "ভেঙে পড়তে" পারে।
এই সংকটময় পরিস্থিতি ফেডারেল রিজার্ভকে একটি কঠিন অবস্থানে ফেলতে পারে। সুদের হার কমানোর প্রয়োজনীয়তার বিপরীতে শুল্কজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গিয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি এখনো ফেডের জন্য প্রধানতম মাথাব্যথার কারণ।
জাপানের দীর্ঘমেয়াদি সরকারি বন্ডের মূল্যও কমেছে, কারণ অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বন্ডের লভ্যাংশের ওঠানামার কারণে বিনিয়োগ কমিয়ে নিচ্ছেন। ৪০ বছর মেয়াদী জাপানি বন্ডের লভ্যাংশ রেকর্ড সর্বোচ্চ লেভেলে পৌঁছেছে।
আজ থেকে ট্রাম্পের তথাকথিত পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে—যা বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের আঘাত হানছে এবং তিনি বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থার ব্যাপক রূপান্তর চলমান রেখেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের পক্ষ থেকে কোনো আলোচনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি—যা ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ আরও গভীর করে তুলেছে।
S&P 500 সূচকের টেকনিক্যাল পূর্বাভাস
সূচকটির দরপতন এখনও অব্যাহত রয়েছে। আজ ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হবে $4943 এর রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করা। এই লেভেল ব্রেক করা হলে মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে এবং পরবর্তী টার্গেট হবে $5011 এর লেভেল। বুলিশ প্রবণতার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা হবে $5084 লেভেলের উপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা—যা ক্রেতাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে।
যদি ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস পায় এবং সূচকটি আবারও নিম্নমুখী হয়, তাহলে ক্রেতাদের $4858 লেভেলে রেজিস্ট্যান্স গড়ে তুলতে হবে। সূচকটির দর এই লেভেল ব্রেক করে নিচের দিকে গেলে সূচকটি দ্রুত $4805-এ নেমে যেতে পারে এবং সেখান থেকে $4751 হবে পরবর্তী টার্গেট লেভেল।