মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনও বাণিজ্য, ভূরাজনীতি ও বৈশ্বিক অর্থবাজারে সক্রিয়ভাবে কৌশলী অবস্থান নিচ্ছেন।
বিনিয়োগকারীরা জানতে চাচ্ছেন: বুধবার আসলে কী ঘটেছিল? হোয়াইট হাউস কেন হঠাৎ করে বাণিজ্যযুদ্ধে যুদ্ধবিরতি বা ৯০ দিনের বিরতির ঘোষণা দিল, যেখানে এর আগে তারা এ ধরনের যেকোনো সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছিল?
রূপকভাবে বললে, ট্রাম্পের মতো আচমকা ১৮০ ডিগ্রির মোড় নিতে পারলে যেকোনো ফর্মুলা-১ ড্রাইভার হিংসা করত—এই মোড় থেকেই শুরু হয় মার্কিন স্টক সূচকগুলোর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, যা শতাব্দীর শুরু থেকে অন্যতম শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট ছিল। অন্যান্য দেশের ইকুইটি মার্কেটও একই গতিতে উঠতে শুরু করে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে মনে হয়, পুরো শুল্ক-যুদ্ধের গল্পটি আসলে একটি ছায়ার মতো, যার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল চীনকে ভয় দেখানো এবং অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলা। ট্রাম্পের কথাবার্তা অনুযায়ী, বিশ্বের অর্ধেক দেশ ইতোমধ্যেই ওয়াশিংটনের কাছে নতি স্বীকার করেছে এবং অনুগ্রহ চেয়েছে।
তবে বেইজিং পিছু হটেনি এবং পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। একদিকে, এটি প্রত্যাশিতই ছিল—আগেই ৯০ দিনের বিরতির গুঞ্জন ছিল। তবে এখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এটিকে বাস্তবে পরিণত করেছে। ট্রাম্প এখন যেসব দেশ তার শর্ত মেনে নিয়েছে, তাদের জন্য ৯০ দিনের আলোচনার সময়ে শুল্ক ১০% নামিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন—তবে চীনের ক্ষেত্রে নয়।
এখন মার্কেট আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে আটকে আছে। কেউ জানে না শেষ পর্যন্ত কী হতে চলেছে। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, পুরো এই নাটক ছিল আমেরিকার ভূমিকাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা এবং চীনকে তার প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে তুলে ধরার মাধ্যম। সাম্প্রতিক শুল্কনীতি যেন পুরোপুরি একটি পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ। তবে চীন যেহেতু এখনও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে, ট্রাম্পকে এখন চীনের প্রতিরোধ ভাঙার জন্য নতুন কৌশল আনতে হবে। কারণ, চীনের সঙ্গে একটি প্রকৃত বাণিজ্যযুদ্ধ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গভীর অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে—এবং ট্রাম্প এটি জানেন।
আর মার্কেটের ট্রেডাররা? তারা আবারও অপেক্ষারত অবস্থায় রয়েছে, কারণ মার্কিন-চীন সংঘাতের ফলাফল এখনও অস্পষ্ট। আমি মনে করি, শেষ পর্যন্ত ওয়াশিংটন ও বেইজিংকে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতেই হবে। কেবলমাত্র শুল্কের হার নিয়ে খেলা করে লাভ নেই। আমি আগেও বলেছি, যদি উভয় পক্ষ ধাপে ধাপে উত্তেজনা কমিয়ে আসে এবং একটি সমঝোতায় পৌঁছে, তাহলে সেটি মার্কেটের জন্য ইতিবাচক হবে—যা ইকুইটি সূচকগুলোর আরও উর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং কমোডিটি মূল্যে পুনরুদ্ধার ঘটাতে পারে। যদি মার্কেটে প্রত্যাশা তৈরি হয় যে মূল্যস্ফীতির গতি কমে আসছে এবং ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে পারে, তাহলে মার্কিন ডলারের আরও দুর্বল হওয়া সম্ভব।
আজকের মার্কিন মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদন এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করতে পারে।
যদি মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদনে পতন দেখা যায়, তাহলে এটি ইকুইটির চাহিদা বাড়াবে, ট্রেজারি বন্ডের ইয়েল্ড বাড়াবে এবং একযোগে মার্কিন ডলারকে দুর্বল করে তুলবে।
সামগ্রিকভাবে, গতকালের শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা পর ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসেটগুলোর ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা বেশি, এবং মার্কিন ডলারের দরপতনও অব্যাহত থাকতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর প্রতিও আগ্রহ বাড়তে পারে।
আজকের পূর্বাভাস:
#SPX
গতকালের তীব্র ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার পর S&P 500 ফিউচারস CFD এখন 5500.00 লেভেলের নিচে কনসোলিডেট করছে। যদি আজকের মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদনে ভোক্তা মূল্য সূচকের পতন নিশ্চিত হয়, তাহলে সূচকটি 5500.00 এর রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করার পর 5682.45 পর্যন্ত এবং পরবর্তীতে 5787.50 পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী হতে পার। সম্ভাব্য এন্ট্রি পয়েন্ট হতে পারে 5519.92।
AUD/USD
গতকালের আশাবাদী মনোভাবের মধ্যে এই পেয়ারের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যদি মার্কিন ভোক্তা মূল্যস্ফীতি হ্রাসের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তাহলে এই পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট অব্যাহত থাকতে পারে। 0.6200 রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করলে মূল্য 0.6280 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। সম্ভাব্য এন্ট্রি পয়েন্ট হতে পারে 0.6207 এর লেভেল।