সোমবারের নিয়মিত সেশনের শেষে মার্কিন স্টক সূচকগুলো সামান্য নিম্নমুখী হওয়ার পর লেনদেন শেষ হয়েছে। S&P 500 সূচক 0.17%, নাসডাক 100 সূচক 0.05% কমেছে, এবং ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ 0.18% হ্রাস পেয়েছে।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—সেশন শেষ হওয়ার পর ফিউচার মার্কেটে বিক্রির চাপ আরও বেড়ে যায়, যার ফলে বড় ধরনের দরপতন দেখা যায়। প্রযুক্তি খাতের শেয়ারগুলো এই দরপতনের দিকে থেকে শীর্ষস্থানীয় ছিল, কারণ ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে এনভিডিয়ার চিপস চীনে রপ্তানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো ডেটা সেন্টার এবং AI সিস্টেমে ব্যবহৃত হাই-পারফরম্যান্স GPU। এই খাতে বাজারে শীর্ষস্থানীয় হওয়ায় এনভিডিয়া এখন তাদের রপ্তানি কৌশল পুনর্বিবেচনার পাশাপাশি বিকল্প বাজার খুঁজে বের করার চাপে রয়েছে। এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-চীনের প্রযুক্তি সংঘাতের আরেকটি বড় ধাপ, যেখানে বিশ্লেষকরা বৈশ্বিক প্রযুক্তি ইকোসিস্টেমে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি ও বিভক্তির আশঙ্কা করছেন।
ইউরোপের Stoxx 600 সূচকও হ্রাস পেয়েছে, কারণ এএসএমএল হোল্ডিং এনভি-এর শেয়ারের দর 7%-এর বেশি পতনের শিকার হয়েছেম প্রত্যাশার চেয়ে দুর্বল অর্ডারের কারণে হয়েছে—যা চিপ খাতে নেতিবাচক প্রবণতা নির্দেশ করে। নাসডাক 100 ফিউচারস 2.3%-এর বেশি হ্রাস পেয়েছে, এবং প্রি-মার্কেট ট্রেডিংয়ে এনভিডিয়ার শেয়ারের দর 7% কমেছে। বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ায় নিরাপদ বিনিয়োগের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় মার্কিন ডলারের দর ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেভেলে নেমে গেছে। স্বর্ণের মূল্য নতুন সর্বোচ্চ রেকর্ড স্থাপন করেছে এবং সুইস ফ্রাঙ্কও শক্তিশালী হয়েছে।
স্পষ্টতই, গত সপ্তাহের অস্থিরতার পর ইকুইটি মার্কেটে যে স্বল্পকালীন কনসোলিডেশন দেখা গিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্ক সংক্রান্ত ঘোষণার পর সেটারও সমাপ্তি ঘটেছে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন একটি নতুন তদন্ত শুরু করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ওপর সম্ভাব্য শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন ঝুঁকি গ্রহণ করতে চাচ্ছে না, কারণ ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক পদক্ষেপের অনিশ্চয়তা এবং বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নীতি ট্রেডারদের চাপের মধ্যে রেখেছে।
আজ দিনের শেষভাগে, ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বক্তৃতার দিকে বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত থাকবে। তার ভাষণে মুদ্রাস্ফীতি, সুদের হার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে ফেডের বর্তমান অবস্থান নিয়ে আলোকপাত করার কথা রয়েছে। মার্কেটে সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে স্থায়ী অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে পাওয়েলের মন্তব্য বাজার পরিস্থিতি ও দিকনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রেডাররা ফেডের নীতিমালায় সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে যেকোনো ইঙ্গিতের প্রতি সতর্ক থাকবে। মুদ্রাস্ফীতি কম থাকায় ফেডের ওপর আর্থিক নীতিমালা কঠোর রাখার চাপ কমে যাচ্ছে। পাওয়েলকে এমন অবস্থান বজায় রাখতে হবে, যা একদিকে বাজারকে আশ্বস্ত করবে এবং অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে। পাশাপাশি শ্রমবাজার সম্পর্কে তার মূল্যায়নও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে, কারণ স্থিতিশীল শ্রমবাজার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হলেও, এটি মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে।
কমোডিটিস মার্কেটে, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে সরবরাহ বৃদ্ধির আশঙ্কায় অপরিশোধিত তেলের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে স্বর্ণের মূল্য 2.2% বেড়ে প্রতি আউন্সে প্রথমবারের মতো $3,300 লেভেল অতিক্রম করেছে।
S&P 500 সূচকের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ:
সূচকটি আবারও দরপতনের শিকার হয়েছে। আজ ক্রেতাদের জন্য সূচকটির মূল্যকে তাৎক্ষণিক রেজিস্ট্যান্স $5,356 লেভেলএ পুনরুদ্ধার করাই প্রধান লক্ষ্য হবে, যাতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রেখে মূল্য $5,399 লেভেলের দিকে যায়। ক্রেতাদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে $5,443 লেভেলের ওপরে নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করা, যা তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। অন্যদিকে, যদি মার্কেটে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা আরও হ্রাস পায়, তাহলে ক্রেতাদের $5,317 লেভেলের কাছাকাছি সক্রিয় হতে হবে। সূচকটির দর এই লেভেল ব্রেক করে নিচের দিকে গেলে সূচকটি $5,282 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, এবং পরবর্তীতে $5,226 পর্যন্ত দরপতনের সম্ভাবনা উন্মুক্ত হতে পারে।