গতকাল নিয়মিত ট্রেডিং সেশন শেষে মার্কিন স্টক মার্কেটের সূচকসমূহে মিশ্র ফলাফল দেখা গেছে। S&P 500 সূচক 0.13% বৃদ্ধি পেয়েছে, অন্যদিকে নাসডাক 100 সূচক 0.13% হ্রাস পেয়েছে। ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ 1.33% দরপতনের শিকার হয়েছে।
আজ এশিয়ার স্টক সূচকগুলো সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা মূলত অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের কৌশল অনুসরণ করছে—বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে চলমান শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনার অগ্রগতির জন্য। বাণিজ্যনীতির অনিশ্চয়তা মার্কেটের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। এর ফলে অনেক কোম্পানি বড় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখেছে, কারণ নতুন শুল্ক তাদের লাভজনকতা ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই সতর্ক মনোভাব ট্রেডিং ভলিউমেও প্রতিফলিত হচ্ছে—যা তুলনামূলকভাবে কম রয়েছে। অনেকেই লিকুইড অ্যাসেট ধরে রাখার পথ বেছে নিচ্ছে যাতে দ্রুত পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।
জাপানের নিক্কেই-225 সূচক 0.8% বৃদ্ধির, অন্যদিকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সূচকসমূহ 0.4% হ্রাস পেয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র চীনা জাহাজের মার্কিন বন্দরে প্রবেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। আজ গুড ফ্রাইডে উপলক্ষে অঞ্চলটির বেশিরভাগ মার্কেট বন্ধ থাকায় অস্থিরতার মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম থাকতে পারে।
তবে উপরের বিষয়গুলো মাথায় রেখেই ট্রেডাররা এখনো নির্দিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতির দিকে নজর রাখছে, যাতে বোঝা যায় ভবিষ্যতে শুল্কনীতি কীভাবে গড়ে উঠবে। ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে আলোচনাকে "গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি" হিসেবে উল্লেখ করায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও তেমনই অগ্রগতির প্রত্যাশা করা হচ্ছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি, ফলে এটি কেবল ট্রাম্পের কথাবার্তার অংশ হিসেবেই থেকে যেতে পারে।
আগের সেশনে দুর্বল হওয়ার পর শুক্রবার ইয়েনের মূল্য তুলনামূলকভাবে স্থির ছিল। জাপানের প্রধান আলোচকগণ জানিয়েছেন যে বৈঠকে মুদ্রা সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়নি, যা মার্কিন পক্ষ থেকে উচ্চতর এক্সচেঞ্জ রেট চাওয়ার শঙ্কা কিছুটা কমিয়েছে।
যদিও ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি, তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন খনিজ সম্পদ চুক্তিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন এবং জানিয়েছেন যে এটি আগামী সপ্তাহেই স্বাক্ষরিত হতে পারে। ফেব্রুয়ারি থেকে এমন বক্তব্য বারবার আসছে, তাই এগুলোর তথ্যগত গুরুত্ব এখন অনেকটাই কমে গেছে। ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি চীনের ওপর আর শুল্ক বাড়াতে চান না, কারণ এতে দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তবে কথার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই—কারণ ঠিক এই মন্তব্যের পরই যুক্তরাষ্ট্র চীনা জাহাজের ওপর শুল্ক আরোপ করে, যা বৈশ্বিক জাহাজ চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র করে তুলতে পারে। এর ফলে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার শিপিং কোম্পানি যেমন কাওয়াসাকি কিসেন কাইশা লিমিটেড এবং এইচএমএম কোং-এর শেয়ার দরপতনের শিকার হয়েছে।
গতকাল ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে কটাক্ষ করে বলেন, চাইলে খুব দ্রুতই তাকে সরিয়ে দেয়া সম্ভব এবং ফেডারেল রিজার্ভের উচিত ছিল ইতোমধ্যেই সুদের হার কমানো। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, চাইলে তিনি পাওয়েলকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারেন।
S&P 500 সূচকের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আজ ক্রেতাদের জন্য মূল লক্ষ্য হবে মূল্যকে $5305 রেজিস্ট্যান্স লেভেল অতিক্রম করানো। এতে সফল হলে সূচকটির আরও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার সুযোগ তৈরি হবে এবং $5342 পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হবে। $5399 লেভেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা ক্রেতাদের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য, কারণ এটি তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। যদি মার্কেটে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের চাহিদা কমে যায় এবং সূচকটির দর নিম্নমুখী হয়, তাহলে ক্রেতাদের মূল্যকে $5296 লেভেলে ধরে রাখতে হবে। এই লেভেল ব্রেক করা হলে সূচকটি দ্রুত $5226 পর্যন্ত কমে যেতে পারে এবং সেখান থেকে $5195 পর্যন্ত নিম্নমুখী হতে পারে।