গতকাল মার্কিন স্টক সূচকগুলোতে নিম্নমুখী প্রবণতার সাথে দৈনিক লেনদেন শেষ হয়েছে। S&P 500 সূচক 0.53% হ্রাস পেয়েছে, নাসডাক 100 সূচক 0.91% হ্রাস পেয়েছে, এবং ডাও জোন্স ইন্ডাট্রিয়াল সূচক 0.71% হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে, ইউরোপের স্টক সূচকগুলো নতুন রেকর্ড উচ্চতার কাছাকাছি পৌঁছেছে, কারণ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় প্রান্তিকের আয়ের প্রতিবেদনের শক্তিশালী ফলাফল প্রকাশ করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার বড় তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়ার পর অপরিশোধিত তেলের মূল্য বেড়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

স্টক্স ইউরোপ 600 সূচক প্রায় 0.3% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে জ্বালানি খাতের শেয়ারের মূল্য 2% এরও বেশি বৃদ্ধি পায়। S&P 500 এবং নাসডাক 100 সূচকের ফিউচার গতকালের দরপতনের পর আজ সামান্য ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্ট প্রদর্শন করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন বাণিজ্য শুল্ক আরোপের হুমকি এবং মার্কিন-চীন উত্তেজনার কারণে স্বর্ণের দাম বাড়ছে।
যখন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোজনেফট এবং লুকঅয়েলকে কালো তালিকাভুক্ত করে তখন ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম প্রায় 4% বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেল প্রতি $65-এর কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এর কারণ হিসেবে মার্কিন প্রশাসন উল্লেখ করেছে যে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে মস্কো শান্তিপূর্ণ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের তেল পরিশোধন প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের প্রধান ক্রেতা, জানিয়েছে যে এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ভবিষ্যতে তেল আমদানি কার্যত অসম্ভব হয়ে যাবে। ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলেছে এবং সরবরাহ বিঘ্নের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা সাধারণভাবে এ ব্যাপারে একমত যে, রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের ফলে উৎপাদন এবং রপ্তানিতে হ্রাস ঘটবে, যা শেষ পর্যন্ত তেলের মূল্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ভারতের পরিস্থিতি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ রাশিয়ার তেলের আকর্ষণীয় দামের কারণে সেখানে দেশটির তেলের চাহিদা অনেক বেশি। ভারতের পরিশোধানাগারগুলো যদি রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করতে বাধ্য হয়, তাহলে এটি জ্বালানির ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে এবং ভোক্তাপর্যায়ে তেলের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক চাপ ফেলতে পারে।
চীন সম্পর্কে বলতে গেলে, ট্রাম্প প্রশাসন গতকাল জানিয়েছে তারা চীনের কাছে সফটওয়্যার রপ্তানি সীমিত করার বিষয়ে বিবেচনা করছে, যা মার্কেটে বাণিজ্য উত্তেজনা পুনরায় বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি দরপতনের শিকার হয়েছে সেই অ্যাসেটগুলো যেগুলো রিটেইল ট্রেডারদের মধ্যে জনপ্রিয় — যেমন মূল্যবান ধাতুভিত্তিক কোম্পানির স্টক, ক্রিপ্টোকারেন্সি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কোম্পানি স্টক।
বর্তমানে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির চতুর্থ প্লেনারি সেশন বেইজিংয়ে শেষ পর্যায়ে রয়েছে, এবং এর ফলাফল সংক্রান্ত একটি বিবৃতি আজ প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। এমন আশা করা হচ্ছে যে, আসন্ন ট্রাম্প-শি সম্মেলনের আগে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট উইকেন্ডে চীনের আর্থিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

S&P 500-এর টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের জন্য আজকের প্রধান কাজ হলো সবচেয়ে নিকটতম রেজিস্ট্যান্স $6,711 লেভেলটি ব্রেক করানো। এই ব্রেকআউট নিশ্চিত হলে সেটি সূচকটিকে ঊর্ধ্বমুখী হতে সাহায্য করবে এবং $6,727 লেভেলের দিকে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যমাত্রা হবে $6,743 লেভেলের ওপরে অবস্থান ধরে রাখা—এটি ক্রেতাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
যদি ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা হ্রাসের কারণে মার্কেটে নিম্নমুখী মুভমেন্ট দেখা যায়, তবে সূচকটির দর $6,697 এরিয়ায় থাকা অবস্থায় ক্রেতারা সক্রিয় হতে পারে। সূচকটির মূল্য এই লেভেল ব্রেক করে নিম্নমুখী হলে ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টটির দর $6,682 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে এবং $6,672 লেভেল পর্যন্তও দরপতন হতে পারে।
