ধারণা করা হচ্ছে, দুই দিনব্যাপী নীতিনির্ধারণী সংক্রান্ত বৈঠক শেষে ফেডারেল রিজার্ভ টানা দ্বিতীয়বারের মতো সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যাতে করে দুর্বল হয়ে পড়া শ্রমবাজারকে সমর্থন দেওয়া যায়। তবে অক্টোবর পেরিয়ে মুদ্রানীতির নমনীয়করণ পদক্ষেপ অব্যাহত রাখার যেকোনো প্রচেষ্টা ফেডের ভেতরে এমন কিছু কর্মকর্তার কাছ থেকে নতুন করে বাধার সম্মুখীন হতে পারে, যারা এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

গত এক মাস ধরে মার্কিন সরকারি কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ থাকায় কোনো অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি — যার ফলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই অনিশ্চিত ও অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। একদিকে, পূর্ববর্তী কিছু সূচক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য দুর্বলতার ইঙ্গিত দেননি। অপরদিকে, কর্মসংস্থান বিষয়ক পরিসংখ্যানে স্পষ্ট স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে — যা মুদ্রানীতিতে উদ্দীপনার প্রয়োজনের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতির চাপ তুলনামূলকভাবে মাঝারি হলেও এখনো বিদ্যমান রয়েছে, এবং অতিরিক্ত হারে সুদের হার কমালে সেই চাপ আরও বাড়তে পারে — যা মূল্যস্ফীতির স্থিতিশীলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির (FOMC) অভ্যন্তরীন মতবিরোধ এই পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে। যারা ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তারা মনে করেন, শ্রমবাজার সংকট মোকাবেলার ঝুঁকি ইতোমধ্যেই মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিকে ছাড়িয়ে গেছে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা দেওয়া জরুরি — এমনকি তার ফলে মূল্যস্ফীতি হয়তো কিছুটা বাড়তে পারে। অপরদিকে, হকিশ বা কঠোর অবস্থানে থাকা সদস্যরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি এখনই সবচেয়ে বড় হুমকি এবং সেটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে — এমনকি তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর বা বেকারত্ব বেড়ে গেলেও।
গত শুক্রবার প্রকাশিত নতুন কনজ্যুমার প্রাইস বা ভোক্তা মূল্য সূচকের ফলাফল অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মূল মুদ্রাস্ফীতি গত তিন মাসের মধ্যেই সর্বনিম্ন গতিতে বেড়েছে। এটি ফেডের জন্য সুদের হার হ্রাসের পক্ষে একটি নির্ধারণকারী উপাদান হতে পারে, যা বছরের শেষ পর্যন্ত মুদ্রানীতি নমনীয় করার ধারাকে বজায় রাখবে।
চলতি বছরে নীতিনির্ধারকরা শুল্ক ও অন্যান্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রভাব বুঝতে অপেক্ষারত ছিলেন। গ্রীষ্মে কর্মী নিয়োগের সংখ্যা রেকর্ড পতনের পর, ফেডের কর্মকর্তারা সেপ্টেম্বরে মূল হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং বছরের শেষ নাগাদ আরও দুইবার সুদের হার কমানোর পূর্বাভাস দেন।
এই মাসের শুরুতে দেওয়া এক বিবৃতিতে, ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল উল্লেখ করেন যে, শ্রমবাজার উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে গেছে এবং আরও অবনতির ঝুঁকি রয়েছে।
ফলে, ফিউচার মার্কেটে এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে আগামীকাল শেষ হতে যাওয়া বৈঠকের পরে আরও একবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট হার কমানোর পথে সম্ভাবনা মূল্যায়ন করে ফেলেছে, এবং ডিসেম্বরেও আরেকবার সুদের হার কমানো হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
যদিও ট্রাম্পের শুল্কনীতি এখনো প্রত্যাশিত হারে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারেনি, তবুও নতুন করে বাণিজ্য শুল্ক আরোপসহ নিয়মিত নানা বিধিনিষেধের ঘোষণা উদ্বেগ তৈরি করছে যে, এসব প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।
এছাড়া এমন পণ্যখাতেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যেগুলো সরাসরি শুল্ক দ্বারা প্রভাবিত হয়নি।
ফেডের বহু কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই মন্তব্য করেছেন, মূল্যস্ফীতি গত চার বছরেরও বেশি সময় ধরে ফেডের ২%-এর লক্ষ্যমাত্রাকে অতিক্রম করেছে এবং তারা ২০২৮ সালের আগ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা দেখছেন না। দীর্ঘ সময় ধরে এই লক্ষ্যমাত্রার ওপরে থেকে যাওয়া মানে হলো দীর্ঘমেয়াদে মুদ্রাস্ফীতি উল্লেখযোগ্যহারে বেড়ে যেতে পারে — যা নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রকৃত অর্থেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
যেভাবেই হোক, ফেড কর্তৃক অত্যন্ত ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণের আশঙ্কাই এখন মার্কিন ডলারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
EUR/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্রের প্রসঙ্গে বলা যায়, ক্রেতাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হবে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1675 লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। শুধুমাত্র এই লেভেল পুনরুদ্ধার করতে পারলেই, এই পেয়ারের মূল্যের 1.1700 লেভেল টেস্ট করার সুযোগ তৈরি হবে। সেখান থেকে এই পেয়ারের মূল্য পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা 1.1725-এ যেতে আরে, তবে প্রধান ট্রেডারদের সমর্থন ছাড়া এটি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.1755-এর লেভেল। অন্যদিকে, যদি ট্রেডিং ইন্সট্রুমেন্টটির মূল্য 1.1645-এ নেমে আসে, তাহলে আমি মূল্য এই লেভেলে থাকা অবস্থায় বড় ক্রেতাদের সক্রিয় হওয়ার প্রত্যাশা করবো। যদি সেখানে কেউ সক্রিয় না হয়, তাহলে 1.1620-এর লেভেল পুনরায় টেস্টের জন্য অপেক্ষা করাই ভালো হবে অথবা 1.1580 থেকে লং পজিশন ওপেন করার সুযোগ খোঁজা উচিত।
GBP/USD পেয়ারের বর্তমান টেকনিক্যাল চিত্র অনুসারে, পাউন্ডের ক্রেতাদের মূল্যকে নিকটবর্তী রেজিস্ট্যান্স 1.3365 লেভেল অতিক্রম করানো উচিত। এটি করতে পারলেই এই পেয়ারের মূল্যের 1.3400 লেভেলের দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে — তবে এই লেভেল ব্রেক করে মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী হওয়া কঠিন হতে পারে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.3435-এর এরিয়ার আশেপাশের লেভেল। অন্যদিকে, যদি এই পেয়ারের মূল্য কমে যায়, তাহলে মূল্য 1.3345 এরিয়ায় থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয়, তাহলে মূল্য এই রেঞ্জের ব্রেক করে নিম্নমুখী হলে সেটি GBP/USD পেয়ারের বুলিশ পজিশনের ওপর বড় ধাক্কা হবে এবং মূল্য কমে অন্তত 1.3320-এ চলে আসতে পারে — যারপর 1.3285 পর্যন্ত দরপতন হতে পারে।
